কুমিল্লা প্রতিনিধি :
কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার জাফরাবাদ (মনিপুর) গ্রামস্থ তুলাগাঁও টু জাফরাবাদ (মনিপুর) যাওয়ার রাস্তার পাশে সরকারি খালের পানিতে একজন যুবকের লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিলে দেবীদ্বার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা এবং নিহতের পরিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার তুলাগাঁও (পাহাড়ী বাড়ী) গ্রামের মৃত হারেছ মিয়ার ছেলে ইউনুছ (৩৯) এর বলে সনাক্ত করে। গত ১৮/১০/২০২১ ইং তারিখ আনুমানিক রাত সাড়ে আটটায় ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে দেবীদ্বার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। বিষয়টি নজরে আসলে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা ছায়াতদন্ত শুরু করে। ভিকটিমের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, নিহত ইফনুছ পেশায় ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালক ছিলো। পরিবারের প্রদান করা তথ্য অনুযায়ী ভিকটিম গত ১৭/১০/২০২১ ইং তারিখ বিকাল আনুমানিক ১৩:৩০ ঘটিকার সময় অটোরিক্সা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় এবং বিকাল আনুমানিক ১৬:৩০ ঘটিকার সময় তার পরিবারের সাথে সর্বশেষ কথা হয় ও রাত থেকে ভিকটিম ইফনুছের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকে। ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়-স্বজনসহ সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও ভিকটিমের কোন সন্ধান পায়নি এবং পরবর্তীতে ১৮/১০/২০২১ ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ০৭:৩০ ঘটিকার সময় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ভিকটিমের লাশ পাওয়ার বিষয়টি জানতে পারে। র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা গত ২১/১০/২০২১ ইং তারিখে মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমের সাথে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার তুলাগাঁও গ্রামের মৃত. ছায়েদ আলী ব্যাপারীর ছেলে সোলায়মান হোসেন (৫৫)এর সাথে যোগাযোগ ছিলো। তবে ভিকটিমের পরিবার ও ভিকটিমের সাথে কারো কোন বিরোধ বা হত্যাকান্ডে কারো সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়ে তাদের কোন ধারনা নেই বলে জানায়। সোলায়মান হোসেন পেশায় একজন কৃষক হলেও সাপধরা তার অন্যতম পেশা ছিলো, এমনকি নেশা বলেও জানা যায়। এমতাবস্থায় প্রাথমিক অনুসন্ধানের জন্য সোলায়মান হোসেন এর বাড়িতে গেলে তার পরিবার জানায় যে, সোলায়মান হোসেন(৫৫) তার নিজ মেয়ের বাড়ি মেহেরপুরে বেড়াতে গেছে। পরবর্তীতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পায় র্যা-১১ সিপিসি-২। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে উক্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখা হয়। পরবর্তীতে ২২/১০/২০২১ ইং তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৩/১০/২০২১ ইং তারিখ রাত আনুমানিক ০৩:০০ ঘটিকার সময়দেবিদ্বার থানাধীন তুলাগাঁও এলাকায় সোলায়মান হোসেন এর অবস্থান সনাক্ত করে তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কথাবার্তা সন্দেহ জনক মনে হলে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে সোলায়মান হোসেন জানায় যে, ভিকটিম তার পরিবারের মহিলা সদস্যদের উত্যক্ত করতো এবং নানা ধরনের কু-প্রস্তাব দিত। বিষয়টি সোলায়মানের পরিবার হত্যাকারী সোলায়মানকে জানালে ভিকটিমের প্রতি তার প্রচন্ড রাগ ও অক্রোশ তৈরী হয়। পরবর্তীতে সে ভিকটিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভিকটিমের সাথে সখ্যতা তৈরী করে। সে সাপধরাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে ভিকটিমকে সাথে নিয়ে যেত। এতে ভিকটিমের সাথে এক ধরনের সম্পর্ক তৈরী হয়। এক পর্যায়ে ভিকটিম সোলায়মান হোসেনকে জানায় যে- সে আরেকটি বিয়ে করতে চায় এবং তাকে পাত্রী দেখাতে বলে। সোলায়মান হোসেন ভিকটিমকে পাত্রী দেখার আশ্বাস দিয়ে যাই-যাচ্ছি বলে কালক্ষেপন করতে থাকে। এরই সূত্রে, গত ১৭/১০/২০২১ ইং তারিখ সকালে সোলায়মান হোসেন ভিকটিমকে জানায় যে, তারা সন্ধ্যায় পাত্রী দেখার জন্য যাবে এবং স্থানীয় একটি সেলুনে ভিকটিমের চুল-দাড়ি কাটিয়ে তার মনে বিশ্বাস তৈরী করে। পরবর্তীতে ১৭/১০/২০২১ ইং তারিখ দুপুরে সোলায়মান হোসেন স্থানীয় দোকান থেকে সেভেন আপ ও ইঁদুর মারা বিষ ক্রয় করে রাখে। রাত আনুমানিক ২১:৩০ ঘটিকার সময় পাত্রী দেখতে যাওয়ার কথা বলে ভিকটিমকে নিয়ে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার জাফরাবাদ (মনিপুর) গ্রামস্থ তুলাগাঁও টু জাফরাবাদ (মনিপুর) যাওয়ার রাস্তায় নির্জন স্থানে গিয়ে ভিকটিমকে সেভেন আপের সাথে ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে খাওয়ায় এবং অচেতন অবস্থায় ভিকটিমকে রাস্তার পাশের খালের পানিতে ফেলে দেয়। ভিকটিমের মৃত্যুর বিষয়ে কেউ তাকে সন্দেহ করবেনা মনে করে সে তার নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিল। কিন্তু র্যাব-১১ সদস্যরা তার বাড়িতে গিয়েছে সংবাদ পেয়ে সে কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকে এবং ২৩/১০/২০২১ ইং তারিখ গভীর রাতে পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য সোলায়মান এলাকায় প্রবেশ করলে সেখান থেকে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা কর্তৃক তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেই উক্ত হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৩/১০/২০২১ ইং তারিখ সকালে সরেজমিনে অনুসন্ধানে সোলায়মান হোসেন কর্তৃক স্থানীয় সেলুনে ভিকটিমের চুল-দাড়ি কাটানো, সেভেন আপ ক্রয় এবং ইঁদুর মারার বিষ ক্রয় করার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। উক্ত বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীকে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় যেকোন হত্যাকান্ড প্রতিরোধ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে সাংবাদিকদের জানান-উপ পরিচালক মেজর সাকিব হোসেন।