আপনাকে তথ্য নিতে হলে আইজিআর ডিআর স্যারের অনুমতি নিয়ে আসেন সাংবাদিককে বললেন সাব-রেজিস্ট্রার।
এম শাহীন আলম :
যুগের পরিবর্তন হলেও তেমন পরিবর্তন হয়নি বেশির ভাগ সেবামুলক প্রতিষ্ঠান গুলোর। তেমনি ফেনীর পশুরাম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের প্রতিটি দলিলে অফিস খরচের নামে চলছে বেপরোয়া নিরব ঘুষ বানিজ্য, যা দেখার কেউ নেই। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বস্হ একাধিক সূত্রে জানা যায়,অফিস খরচের নামে ঘুষের টাকা না দিলে নানান অজুহাতে সেবা গ্রহিতাদের দিনের পর দিন একটার পর একটা সমস্যা নিয়ে ঘুরতে হয়। দলিল লেখকদের সাথে যোগসাজশ সহ অফিস খরচের নামে ঘুষের টাকার তদারকি এবং ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে রয়েছেন উল্লেখ্য সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সহকারি মো. শাহ আলম। এই অফিসটির বিশ্বস্হ সূত্রে আরো জানা যায়, সাব রেজিস্ট্রার আকলিমা ইয়াসমিন সঠিক সময়ে নিয়মিত অফিসে আসেন না।তিনি তার ইচ্ছা মতো বেলা ১২টার আগে খুব কমেই আসেন। কিন্তু দিন শেষে তিনি অফিস খরচের নামে ঘুষের টাকার ভাগ দলিলের ফাইল গনে গনে কমিশন নিতেও তিনি ভুলেন না। সাব রেজিস্ট্রার আকলিমা ইয়াসমিনের আচরনে অফিসের প্রতিটি কর্মচারি অস্তুুষ্ট বলেও জানা যায়।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, আগে সরাসরি অফিসের লোকজন গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নিলেও বর্তমানে তারা এই সরাসরি ঘুষ না নিয়ে সিস্টেম পরিবর্তন করে কৌশলে দলিল লেখকদের মাধ্যমে দলিলের সরকারি ফি ছাড়াও কন্ট্রাকের মাধ্যমে অফিস খরচের নামে সর্বনিন্ম ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছেন দলিল লেখকরা।
সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে পশুরাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা নিতে আসা রফিক মিয়া জানান,আমি আমার ৬ শতক বসত ভিটার দলিলের নকলের কপি নিতে আসছি আমার কাছে সহকারি মো. শাহ আলম নকলের কাগজ নিতে ১৫ হাজার টাকা লাগবে বলে জানান,পরে তার সাথে আমার ৯ হাজার টাকা চুক্তি হয় ৭ হাজার টাকা দিয়েছি বাকি ২ হাজার টাকা দলিলের নকলের কপি হাতে পেয়ে দিবো। তিনি জানান,এর আগে দুইবার এসে ফিরে যাই কিন্তু সহকারি শাহ আলমের সাথে ৯ হাজার টাকা চুক্তি করেছি আজ। আশা করি আগামী দুই দিনের মধ্যে নকল পেয়ে যাবো।রফিক জানায়,এই অফিসে আজ সহ তিন দিন এসে যা বুঝলাম এখানে ঘুষ ছাড়া একটা কাজও হয় না।
সরেজমিনে ছদ্মবেশে পশুরাম রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল করতে আসা বেশ কয়েকজন গ্রাহকের সাথে কথা বললে তারা জানান, এখানে বর্তমানে দলিল করতে গেলে সরাসরি অফিসের লোকের সাথে কথা বললে কোন সমাধান হয় না। এখন দলিলের সব কিছু করতে হয় দলিল লেখকদের মাধ্যমে। তারা জানান, সরকারি ফি ছাড়াও অফিস খরচের নামে বারতি টাকা না দিলে দিনের পর দিন বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে ঘুরাতে থাকে। তাই বাধ্য হয়ে দলিল লেখকদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয় সেবা নিতে আসা সকল গ্রাহকদের। সরেজমিনে দিনভর অনুসন্ধানে দেখা যায়, একজন গ্রাহকও পাওয়া যায়নি যে ঘুষ ছাড়া একটি কাজ সহজে পেতে।
স্হানীয় প্রতেক্ষ্যদর্শী লোকজন ও সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা জানান,পশুরাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে বর্তমান রেজিস্ট্রার আসার পর থেকে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের হয়রানি বেড়ে গেছে চরমে। এখানকার দলিল লেখকরাও একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অফিস কর্তাদের যোগসাজশে ওপেন সিক্রেট অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে সকাল সাড়ে নয়টা গণমাধ্যম কর্মীরা অফিসটিতে প্রবেশ করলেও সাব রেজিস্ট্রার আকলিমা ইয়াসমিন তিনি ১২টার পর অফিসে প্রবেশ করেন।তার সাথে অফিস এসাইনমেন্ট নিয়ে সাংবাদিক পরিচয় কথা বলতে চাইলে তিনি এজলাসে বসে সেবা গ্রহিতাদের সামনে জোর গলায় বলেন আমি আপনার সাথে কোন কথা বলতে পারবো না, আপনি আইজিআর স্যার ডিআর স্যারের অনুমতি নিয়ে আসলে আমি কথা বলবো। আর কিছু বলার থাকলে আপনি আমার সহকারির সাথে বলুন।
সহকারি শাহ আলম নিউজ না করতে অফিসের সিঁড়িতে এসে নগদ টাকা নিয়ে দেওয়ার জন্য ধস্তাধস্তি করেন আর বলেন ভাই কোথায় ঘুষ না চলে আমাদের ক্ষতি করে আপনার কি লাভ,আপনার মতো বহু সাংবাদিক প্রতিদিন কেউ না কেউ আসে। সাংবাদিক যে আসুক আমি সন্মান করার চেষ্টা করি,আপনিও বহু দুর থেকে আসছেন এটা আপনাদের গাড়ি ভাড়া ধরের রাখেন ভাই এমন বলে টাকা দিতে সহকারি শাহ আলম খুব অনুরোধ শুরু করেন। স্হানীয় সচেতন মহলের দাবি পশুরাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গ্রাহকদের হয়রানি থেকে বাঁচতে ঘুষ বানিজ্য বন্ধে যথাযথ ব্যবস্হা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে অনিয়ম আর ঘুষ বানিজ্যি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আরো বিস্তারিত ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে।