মুহাম্মদ মতিন খন্দকার টিটু :
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় একশ’ বিঘা জমির গাঢ় বেগুণী ও সবুজ ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। বিশে^র সর্ববৃহৎ প্রতিকৃতি এটি। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’। জাতির জনকের এই চিত্রকর্ম আগামি দুই সপ্তাহ’র মধ্যেই বিশে^র সবচেয়ে বড় ‘শস্যচিত্র’ হিসেবে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বাংলাদেশের জন্য নতুন ইতিহাস তৈরী করবে। সেই অপেক্ষার প্রহর গুণছেন পুরো বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং বেসরকারি কোম্পানি ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের সহযোগিতায় এই ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ নামে বিশাল আয়তনের এই প্রতিকৃতি তৈরী করা হয়েছে। গত ২৯জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উচ্চ ফলনশীল দুই ধরণের ধানের চারা রোপনের মাধ্যমে এই কর্মযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এতে সভাপতি ছিলেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার নিভৃত পল্লী ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ। আর সেই মাঠে দ্ইু ধরণের ধানের চারা রোপণের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে আঁকা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। যা আরও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে বেশকয়েকজন শ্রমিক নিরলসভাবে কাজ করছেন। কেউ আগাছা পরিস্কারে ব্যস্ত, আবার কেউ ব্যস্ত সেচ দেওয়ার কাজে। ইতিমধ্যে শস্যচিত্রে ভেসে উঠেছে জাতির অবয়ব। তবে খালি চোখে শস্যচিত্রটির পূর্ণাঙ্গ রুপ দেখা সম্ভব না হলেও পাখির চোখে (উঁচু থেকে) একশ’ বিঘা জমিতে রোপনকৃত ধানের দৃশ্যে ধরা পড়ছে জাতির পিতার শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই শস্যচিত্রটি দেখতে স্থানীয়দের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আসা অনেকেই ভিড় করছেন।এসময় কথা হয় কাহালু উপজেলার বাসিন্দা হোসেন আলীর সঙ্গে। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। সংবাদ মাধ্যমে ফসলি মাঠে ধান গাছের চারার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরীর বিষয়টি জানতে পেরে এটি দেখার ইচ্ছে হয় তাঁর। তাই এসেছেন তিনি। ড্রোনের তোলা ছবিতে সেটি দেখতে পেয়ে অভিভূত হন। সেইসঙ্গে ধানের চারা দিয়ে জাতির জনকের এই প্রতিকৃতি তৈরী করায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী একজন মানুষ হিসেবে গর্ববোধ করেন এই ব্যক্তি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কৃষিবিদ ফয়জুল সিদ্দিকী বলেন, আগামি ১০মার্চের পর থেকেই সার্ভারের মাধ্যমে এই শস্যচিত্রের আয়তনের পরিধি নির্ধারণ করার জন্য মাপ যোগ শুরু করা হবে। একইসঙ্গে সব দালিলিক কাগজপত্র ও ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর’ ভিডিও গিনেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে তাদের পক্ষ থেকে দুইজন স্বাক্ষী পরিদর্শনে আসবেন। সবকিছু দেখে প্রতিবেদন জমা দেবেন তাঁরা। এরপর বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হিসেবে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। জাতির জনকের জন্মশতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতেই কৃষিবিদ ও প্রকৌশলীদের যৌথ পরিকল্পনায় কৃষি ও কৃষকের বঙ্গবন্ধুর বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রতিকৃতি তৈরীর এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয় বলেও মন্তব্য করেন প্রকল্পের সমন্বয়ক ফয়জুল সিদ্দিকী। বাস্তবায়নকারী কোম্পানি ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান বলেন, এই শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শস্যচিত্রের আয়তন হবে ১২লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। শস্যচিত্রের দৈর্ঘ্য ৪শ’ মিটার এবং প্রস্থ হবে ৩শ’ মিটার। যা হবে বিশে^র সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র। কারণ সর্বশেষ বিগত ২০১৯ সালে চিনে তৈরী শস্যচিত্রটির আয়তন ছিল ৮লাখ ৫৫হাজার ৭৮৬বর্গফুট। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি তৈরি করার জন্য দুই ধরনের ধান বেছে নেওয়া হয় গাঢ় বেগুণী ও সোনালী রং। চিন থেকে এই ধানের জাতটি আমদানি করা হয়েছে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী এই নিভৃত পল্লীর বালেন্দা গ্রামের ফসলি মাঠে একশত বিঘা জমি লীজ নেওয়া হয়। পরে ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যদের নিয়ে লে-আউট তৈরী করা হয়। পরে চারা লাগানোর জন্য নির্ধারিত মাঠ প্রস্তুত করা হয়। এই কাজে একশ’ বিএনসিসি সদস্যের দল অংশ নেন। চারা রোপন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পুরোদমে চলে চারা রোপনের কাজ। প্রতিদিন একশত বিশ থেকে একশত ত্রিশজন শ্রমিক এই চারা রোপণ কাজ করেছেন। এখনও বেশ কয়েকজন শ্রমিক শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি নিখুঁত ও ক্রটিহীনভাবে ফুটিয়ে তুলতে সেচ ও পরিচর্যায় কাজ করছেন। ইতিমধ্যেই একশ’ বিঘা জমিতে রোপনকৃত ধানের চারায় ফুটে উঠেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি।